ঢাকা, ২ জুন ২০২৫ — পরিবেশবান্ধব ও জ্বালানি সাশ্রয়ী যানবাহন ব্যবহারে উৎসাহ দিতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ইলেকট্রিক বাইক (ই-বাইক) উৎপাদনে বড় ধরনের কর ছাড় ঘোষণা করেছে সরকার। স্থানীয় পর্যায়ে ই-বাইক সহজলভ্য করতে এই খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য দেওয়া হয়েছে নানা ধরনের প্রণোদনা।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২ জুন জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনকালে জানান, ই-বাইক উৎপাদনে উৎসাহ দিতে স্থানীয়ভাবে ৫ শতাংশের বেশি সব ধরনের কর মওকুফের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, যন্ত্রাংশ আমদানি ও স্থানীয় ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভ্যাট, আগাম কর (এডভান্স ট্যাক্স) ও সম্পূরক শুল্ক পুরোপুরি অব্যাহতি দেওয়া হবে।
কর সুবিধা পেতে যেসব শর্ত পূরণ আবশ্যক
তবে এসব কর সুবিধা পেতে উদ্যোক্তাদের কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে। তা হলো:
- নিবন্ধন: বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে।
- বিআরটিএ অনুমোদন: বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে ই-বাইক (টু-হুইলার) উৎপাদনের জন্য মেকারস কোড ও টাইপ অনুমোদন বাধ্যতামূলক।
- উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহার: উৎপাদনে ব্যবহৃত চেসিস ও মেটাল হাউজিং তৈরি করতে প্রতিষ্ঠানটির কারখানায় সিএনসি টিউব বেন্ডার, টিউব নচার, ওয়েল্ডিং মেশিন, হাইড্রোলিক প্রেস, প্লাজমা কাটার বা সিএনসি লেজার কাটার, সারফেস ফিনিশিং মেশিন ইত্যাদি থাকতে হবে।
- প্লাস্টিক মেশিনারি: ই-বাইকে ব্যবহৃত প্লাস্টিকজাত পণ্যের উৎপাদনে প্রয়োজনীয় মেশিনারি কারখানার ভেতরেই স্থাপন করতে হবে।
- রং ও ফিনিশিং ইউনিট: রং করার যাবতীয় কার্যক্রম কারখানায় বাস্তবায়ন করতে হবে।
- ইলেকট্রিক মোটর উৎপাদন: ই-বাইকের মোটর সম্পর্কিত যন্ত্রাংশ নিজস্বভাবে উৎপাদন করতে হবে।
- ব্যাটারি সরবরাহ: প্রস্তুতকারীকে নিজস্ব ব্যাটারি উৎপাদন করতে হবে অথবা স্থানীয় ব্যাটারি প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে চুক্তিভিত্তিকভাবে ব্যাটারি সংগ্রহ করতে হবে।
- মান ও পরিবেশ সনদ: আইএসও সনদের পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পরিবেশ ছাড়পত্র নিতে হবে।
- নিয়োগ: কারখানায় কমপক্ষে ২৫০ জন কর্মী নিয়োগ থাকতে হবে।
- বিক্রয়োত্তর সেবা: গ্রাহক সন্তুষ্টি নিশ্চিত করতে বিক্রয়, খুচরা যন্ত্রাংশ ও বিক্রয়োত্তর সেবা চালু রাখতে হবে।
ই-বাইক খাতে বিনিয়োগে বাড়ছে আগ্রহ
বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের পরিবহন খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। একদিকে যেমন জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমবে, অন্যদিকে কর্মসংস্থান ও প্রযুক্তি খাতে বাড়বে বিনিয়োগ। পাশাপাশি, স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এবং দেশের সবুজ অর্থনীতির দিকে অগ্রযাত্রা ত্বরান্বিত হবে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে ই-বাইক খাতের উদ্যোক্তারা যেমন সরাসরি উপকৃত হবেন, তেমনি সাধারণ মানুষও কম দামে পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।