বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞানপ্রেমীদের জন্য এক নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA) পরিচালিত সোলার অরবিটার মহাকাশযান প্রথমবারের মতো সূর্যের দক্ষিণ মেরুর বিস্ময়কর ছবি ও ভিডিও পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। মহাকাশ গবেষণায় এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
🌞 সূর্যের উত্তপ্ত ও অস্থির রূপের সন্ধান
এই ভিডিওতে সূর্যের বায়ুমণ্ডলের কিছু অংশে তাপমাত্রা ১০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোর প্রমাণ মিলেছে।
দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে দেখা গেছে গাঢ় মেঘের মতো গ্যাসীয় স্তর, যেগুলোর তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে কম হলেও প্রায় ১ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উত্তপ্ত।
🛰️ সোলার অরবিটারের এই মিশন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সূর্যের কার্যকলাপ সরাসরি পৃথিবীর স্যাটেলাইট, কমিউনিকেশন সিস্টেম এবং বিদ্যুৎ গ্রিডের উপর প্রভাব ফেলে। তাই বিজ্ঞানীরা সূর্যের আচরণ ও চৌম্বকীয় পরিবর্তন বোঝার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই সোলার অরবিটারের মতো একটি মিশনের অপেক্ষায় ছিলেন।
ইএসএ’র বিজ্ঞান বিভাগের পরিচালক ক্যারল মান্ডেল বলেন,
“এই প্রথমবার আমরা মানবজাতিকে সূর্যের মেরুর প্রকৃত রূপ দেখাতে সক্ষম হয়েছি। এটি প্রযুক্তিনির্ভর সভ্যতার জন্য একটি বড় অগ্রগতি।”
🔍 সূর্যের চৌম্বক চক্র ও মহাকাশীয় ঝড়ের সম্পর্ক
সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্র প্রতি ১১ বছর অন্তর দিক পরিবর্তন করে। এই সময়ে এর কার্যকলাপ হয়ে ওঠে চরম মাত্রায় বিশৃঙ্খল। ফলস্বরূপ, সূর্য তার অভ্যন্তরীণ শক্তি মুক্ত করে দেয় – যা তৈরি করে সৌরঝড় (Solar Storms)।
এসব ঝড় পৃথিবীর দিকে উচ্চ-গতির কণিকা পাঠাতে পারে, যা:
- স্যাটেলাইট যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটায়
- বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করে
- তবে একই সাথে সৃষ্টি করে অরোরা বা মেরুজ্যোতির রঙিন দৃশ্য
💻 এখন তৈরি হবে সূর্যভিত্তিক ‘স্পেস ওয়েদার’ পূর্বাভাস মডেল
সোলার অরবিটারের ভিডিওগুলোর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা সূর্যের মেরুর চৌম্বক তথ্য বিশ্লেষণ করতে পারছেন। এর ফলে সম্ভব হবে সূর্যের কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার মডেল তৈরি করা, যা আগে সম্ভব ছিল না।
এই মডেলের মাধ্যমে:
- মহাকাশীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া যাবে
- স্যাটেলাইট পরিচালনাকারী সংস্থাগুলো সতর্ক থাকতে পারবে
- বিদ্যুৎ গ্রিড পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলো ঝুঁকি কমাতে পারবে
- অরোরা পর্যবেক্ষকদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে
📸 বিজ্ঞানীদের চোখে সূর্যের আসল রূপ
পৃথিবী থেকে সূর্যকে আমরা সাধারণত উজ্জ্বল একটি চাকতির মতো দেখি। তবে বিশেষ ধরনের ফ্রিকোয়েন্সি ও ফিল্টার ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা এর গঠন, চৌম্বক শক্তি এবং গ্যাসীয় অগ্নিশিখা বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হন। সোলার অরবিটার এই কাজে এনে দিয়েছে নতুন মাত্রা।