শরীরের ত্বকে সূঁচ বা অনুরূপ যন্ত্রের সাহায্যে ক্ষত সৃষ্টি করে রঙিন নকশা আঁকার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ট্যাটু বা উল্কি। আধুনিক ফ্যাশনের অংশ হিসেবে এই চর্চা পশ্চিমা দেশগুলোতে বেশ জনপ্রিয় হলেও, ইসলাম ধর্মে এটি স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ।
✒️ ট্যাটু: ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ কেন?
ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে, শরীরের গঠনে পরিবর্তন আনা আল্লাহর সৃষ্টির অপব্যবহার। বুখারি শরিফ (হাদিস ৫৯৩২-৫৯৩৩) ও মুসলিম শরিফ সহ একাধিক হাদিসে উল্কি আঁকা এবং আঁকানো—দু’টোকেই হারাম ঘোষণা করা হয়েছে।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“যে নারী উল্কি অঙ্কন করে এবং যার জন্য করে, আল্লাহ তাদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন।”
(বুখারি, হাদিস: ৫৫৯৮; মুসলিম, হাদিস: ৫৬৯৩)
📖 কোরআনের দৃষ্টিকোণ
সুরা তীন-এর ৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:
“নিশ্চয় আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি শ্রেষ্ঠতম আকৃতিতে।”
তাই, শরীরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিবর্তন এনে তাকে বিকৃত করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কোরআন নির্দেশ দিয়েছে রাসুল (সা.) যা দিয়েছেন তা গ্রহণ করতে এবং যা থেকে নিষেধ করেছেন, তা পরিহার করতে।
⚠️ ট্যাটুর স্বাস্থ্য ঝুঁকি
শুধু ধর্মীয় কারণে নয়, ট্যাটু বা উল্কির রয়েছে বেশ কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকি:
- ত্বকে সংক্রমণ বা ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা থাকে
- অ্যালার্জি ও চুলকানি দেখা দিতে পারে
- ট্যাটুর কারণে চামড়ার উপর স্থায়ী দাগ বা ক্ষত তৈরি হতে পারে
- অজু ও গোসল সঠিকভাবে সম্পন্ন না হলে ইবাদত সহিহ হয় না
বিশেষ করে যদি ট্যাটু জলরোধী হয় এবং পানি ত্বকে পৌঁছাতে না দেয়, তবে ফরজ গোসল বা অজু শুদ্ধভাবে হবে না, ফলে ইবাদত বাতিল হয়ে যাবে।
🧬 পশ্চিমা ফ্যাশনের অন্ধ অনুসরণ
বর্তমানে অনেক তারকা, সেলিব্রিটি এমনকি সাধারণ মানুষও ট্যাটুকে ফ্যাশন হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে অন্ধভাবে অন্য সংস্কৃতির অনুকরণ করা উচিত নয়।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“যে ব্যক্তি কোনো জাতির অনুকরণ করে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত।”
(আবু দাউদ, হাদিস: ৪০৩১)
✅ ইসলাম কী নির্দেশ দেয়?
ইসলাম মানুষের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে রক্ষা করতে বলে। তাই ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে ট্যাটু সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ (হারাম)। ব্যক্তি জীবনে ট্যাটু থাকলে তাওবা করে তা সরিয়ে ফেলার প্রচেষ্টা গ্রহণ করাই উত্তম।