জাতীয় স্টেডিয়ামে নিরাপত্তা শৈথিল্য: মাঠে ঢুকে রিলস-টিকটক, শৌচাগারে চুরি!

সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত জাতীয় গোল্ডকাপ অনূর্ধ্ব-১৭ টুর্নামেন্টের ফাইনালে জাতীয় স্টেডিয়ামে দেখা গেছে নজিরবিহীন নিরাপত্তা ঘাটতি। খেলার একপর্যায়ে সাধারণ দর্শকরা অবাধে মাঠে প্রবেশ করে রীতিমতো রিলস ও টিকটক ভিডিও বানানো শুরু করেন। সেইসঙ্গে শৌচাগার থেকে কল চুরির মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছে স্টেডিয়াম প্রশাসন।

খেলায় কড়া নিরাপত্তা, পরে ভেঙে পড়ে নিয়ন্ত্রণ

গত বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় নারী বিভাগে ময়মনসিংহ বনাম রাজশাহী ও পুরুষ বিভাগে ময়মনসিংহ বনাম রংপুর দলের মধ্যকার ফাইনাল ম্যাচ। দিনের শুরুতে নিরাপত্তা ছিল কঠোর। গণমাধ্যমকর্মীরাও পরিচয়পত্র ছাড়া মাঠে প্রবেশ করতে পারেননি। কিন্তু বিকেল ৫টার পর মাঠে প্রবেশের চিত্র পুরোপুরি বদলে যায়।

প্রধান অতিথি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া মাঠ ত্যাগ করার পর থেকেই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। পুরস্কার বিতরণের সময় সাধারণ দর্শকরা একে একে মাঠে প্রবেশ করতে শুরু করেন। কেউ মাঠের ঘাসে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ তৈরি করছেন রিলস, কেউবা গোলপোস্টের কাছে বসে আড্ডা দিচ্ছেন—এমন চিত্র চলে প্রায় ঘণ্টাখানেক।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদাসীন

ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যদের অনেকেই ছিলেন ফোনে ব্যস্ত বা গল্পে মগ্ন। দর্শকদের মাঠে প্রবেশ রোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

স্টেডিয়াম প্রশাসনের ব্যাখ্যা

জাতীয় স্টেডিয়ামের প্রশাসক কামরুল ইসলাম কিরণ বলেন,

“এমন ম্যাচে বারবার লোকজন সরানো সম্ভব নয়, এটা বুঝতে হবে। তবে খেলা আয়োজনের আগেই আমি মিটিংয়ে বলেছিলাম, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা কর্মী দরকার। হয়তো নিরাপত্তা ছিল, কিন্তু মনোযোগের অভাব ছিল।”

তিনি আরও বলেন,

“যারা মাঠে ঢুকেছে, তারা কেউ খেলাসংশ্লিষ্ট পরিচয়পত্র দেখিয়েছে, কিন্তু তাদের নির্দিষ্ট পাস ছিল না। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশেরাও বলেছেন, তারা কারও পরিচয় জানেন না। এমন পরিস্থিতিতে ক্রীড়া পরিদপ্তরের নিজস্ব লোক মাঠে থাকাই উচিত ছিল।”

চুরি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ

সদ্য সংস্কার হওয়া জাতীয় স্টেডিয়ামের শৌচাগার থেকে কল চুরির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানিয়েছেন কামরুল ইসলাম কিরণ।

“৪ জুন ভুটান এবং ১০ জুন সিঙ্গাপুর ম্যাচের দিন অনেক শৌচাগার থেকে কল চুরি হয়েছে। কারা করেছে তা অজানা।”

প্রশ্ন উঠছে নিরাপত্তা নিয়ে

জাতীয় ক্রীড়াঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ভেন্যুতে এমন নিরাপত্তা শৈথিল্য প্রশ্ন তুলছে আয়োজন ও ব্যবস্থাপনার পেশাদারিত্ব নিয়ে। যেখানে আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ম্যাচ আয়োজন হয়, সেখানে দর্শকের এভাবে মাঠে ঢুকে পড়া এবং মূল্যবান সরঞ্জাম চুরির ঘটনা উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *