২০ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব শরণার্থী দিবস। বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়শিবির হিসেবে খ্যাত কক্সবাজারে বর্তমানে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা বাস করছে। তবে রাখাইন থেকে নতুন করে অনুপ্রবেশ করে আসা রোহিঙ্গাদের কারণে আশ্রয়শিবিরের পরিস্থিতি ক্রমেই জটিলতর হচ্ছে।
রাখাইনে চলমান অস্থিতিশীলতা ও আরাকান আর্মির হামলার ফলে নতুন করে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকছে। এর সঙ্গে ভারত থেকেও কিছু রোহিঙ্গা আশ্রয় চাইছে। কক্সবাজারের উখিয়ার ক্যাম্প-১-এ এমন কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। ভারত থেকে আসা মোহাম্মদ আয়ুব জানান, “আমাদের গোষ্ঠীর ৬ পরিবার এবং ২৬ জন সদস্য কুড়িগ্রাম দিয়ে বিএসএফের সহায়তায় বাংলাদেশে আসতে সক্ষম হয়েছি।” অন্যদিকে দিল আরা বেগম বলেন, “৭ বছর পর রাতে আমাদের বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে, যদিও সেখানে সরকার বিদেশিদের গ্রহণ করে না।”
মিয়ানমারের মংডু থেকে পালিয়ে আসা জমির জানালেন, “নির্যাতনের ভয়ে পালিয়েছি। পালানোর সময় পাহাড় থেকে পড়ে পায় ভেঙেছে, অনেক দিন লতা-পাতা খেয়ে বেঁচে ছিলাম।” বুচিদং থেকে আসা নুর নাহারও বর্ণনা করেন আরাকান আর্মির অত্যাচারের কথা এবং স্বামী ও তিন ছেলেকে হারানোর বেদনাদায়ক স্মৃতি।
প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমার সরকার সাম্প্রতিক সময়ে এক লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনে সম্মতি দিলেও রাখাইনে চলমান সংঘাতের কারণে বাস্তবায়নে ধীরগতি রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের মধ্যে রাখাইন ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে অনিশ্চয়তা বজায় আছে।
উখিয়ার ক্যাম্প-১-এর নুর আহমদ বলছেন, “রাখাইনে অসহায়দের আমরা ভিক্ষা দিতাম, এখন আমরা নিজেই আশ্রয়শিবিরে ভিক্ষা করছি। শান্তি নেই, নিজের দেশে ফিরে কাজ করতে চাই।” মোহাম্মদ রশিদ জানান, “জাতিসংঘ, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকার মিলিতভাবে সমস্যা সমাধান করে আমাদের অধিকার রক্ষা করুক, যাতে আমরা স্বদেশে ফিরতে পারি।”
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, “আমাদের প্রত্যাবাসন প্রয়োজন নেই। আমরা বিদেশী নই। আমাদের নিজ দেশে যেতে হবে। কিন্তু নির্যাতন যেন বন্ধ হয়, সেটাই আমরা বিশ্ববাসীর কাছে অনুরোধ করছি।”
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, “যদি দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো অঞ্চলকেই প্রভাবিত করবে।”
মিয়ানমার গত প্রায় আট বছরে এক রোহিঙ্গাকেও ফেরত নিতে পারেনি, অথচ আশ্রয়শিবিরে প্রতিবছর গড়ে ৩০ হাজারের বেশি নতুন রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিচ্ছে। এই বাস্তবতা শরণার্থীদের জীবনের কঠোর বাস্তবতা তুলে ধরছে।