যখন কেউ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসে বলেন, “আমি আবার বাঁচলাম, যেন নতুন করে জন্ম নিলাম,” তখনই বোঝা যায় জীবনের প্রকৃত মূল্য কত গভীর। আর সেই জীবনের উপহার যদি দেন একজন স্ত্রী, নিজের কিডনি দিয়ে—তাহলে তা শুধু একটি পরিবারের নয়, গোটা সমাজের জন্য এক অনন্য মানবিক বার্তা হয়ে উঠে। এমনই এক হৃদয়স্পর্শী গল্প যশোরের শার্শার কুদ্দুস বিশ্বাসের।
মাছ ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত কুদ্দুস বিশ্বাস, যিনি ‘মাছ কুদ্দুস’ নামে শার্শায় ব্যাপক পরিচিত, সম্প্রতি সুস্থ হয়ে ফিরে এসেছেন তাঁর প্রিয় গ্রাম বাঁগআড়ায়। এই ফেরা ছিল অন্যরকম—একটি গভীর ভালোবাসার গল্পের নিদর্শন।
কয়েক বছর আগে কুদ্দুসের দুটো কিডনি অচল হয়ে যাওয়ায় তার জীবন থমকে গিয়েছিল। সেই কঠিন সময়ে তার স্ত্রী ফারজানা বেগম নিজের একটি কিডনি দান করে জীবন বাঁচানোর মহান কাজটি করেন। ফারজানার এই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কুদ্দুসের জীবনে নতুন আলো জ্বেলে দেয়।
চিকিৎসার জন্য তুরস্কে চার মাস কাটিয়ে দেশে ফিরে কুদ্দুস সিদ্ধান্ত নেন প্রথমে নিজের শেকড়ের কাছে ফিরে যাবেন। শুক্রবার (২০ জুন) বিকেলে ঢাকা বিমানবন্দর থেকে হেলিকপ্টারে করে তিনি পিপড়াগাছি ইকোপার্ক মাঠে পৌঁছান, যেখানে হাজারো মানুষ ফুল দিয়ে, মালা দিয়ে ও কৃতজ্ঞ চোখে তাকে স্বাগত জানায়।
কুদ্দুস বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, “সৃষ্টিকর্তা আমাকে নতুন জীবন দিয়েছেন। এই জীবন শুধু আমার নয়, এটি মানুষের জন্য। আমি স্ত্রী ফারজানার প্রতি চিরঋণী এবং আমার গ্রামের প্রতিটি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
স্থানীয় সাংবাদিক শেখ কাজিম বলেন, “একজন স্ত্রী নিজের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ দান করে স্বামীর জীবন বাঁচিয়েছেন—এটাই প্রকৃত ভালোবাসার প্রকাশ। এমন ঘটনা সমাজে বিরল হলেও এটি সকলের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।”
কুদ্দুস বিশ্বাসের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় তিন শতাধিক মানুষ কাজ করেন। ব্যবসায়িক সফলতার পাশাপাশি তিনি সামাজিক উন্নয়নে নিয়মিত অবদান রাখছেন। তার সুস্থ হয়ে ফেরা অর্থ প্রচুর মানুষের জীবনে নতুন আলো ছড়ানো।