লক্ষ্মীপুরে মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা: ১৩ দিনেও গ্রেফতার হয়নি কেউ, ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী

লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলায় চোর সন্দেহে এক মানসিক ভারসাম্যহীন ভবঘুরে ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রায় দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ, যা এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

⚠️ কী ঘটেছিল সেদিন?

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ জুন রাত আড়াইটার দিকে রামগতি উপজেলার চর পোড়াগাছা ইউনিয়নের পূর্ব চর কলাকোপা গ্রামে দুলাল সরদারের দোকানের সামনে অজ্ঞাতপরিচয় মানসিক ভারসাম্যহীন এক ব্যক্তিকে চোর সন্দেহে নির্মমভাবে মারধর করা হয়।

পরদিন ৯ জুন সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

📝 মামলা, কিন্তু নামহীন এজাহার

১০ জুন রামগতি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মজিবুর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে অভিযুক্তদের নাম না থাকার কারণে কেউ গ্রেফতার হয়নি।

👤 সন্দেহভাজনদের নাম ফাঁস করলেন এলাকাবাসী

স্থানীয় সূত্রে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তারা হলেন:

  • ফখর উদ্দিন (মৃত মুকবুল আহম্মদের ছেলে)
  • মাকসুদ (জসিম উদ্দিনের ছেলে)
  • আজম (সাহাদাত হোসেনের ছেলে)
  • আরিফ (সহীদের ছেলে)
  • সবুজ (মালেকের ছেলে)
  • মাকসুদ (সিরাজ ডুবাইর ছেলে)
  • আবদুল কাদের (মুনাফের ছেলে)
  • জিটু (খলিলের ছেলে)
  • হাবিবউল্লাহ (হাসিমের ছেলে)

এদের মধ্যে কয়েকজন আহত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যান এবং ‘সড়ক দুর্ঘটনা’ বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ভর্তি করেন। এরপর থেকেই তারা সবাই পলাতক।

💬 স্থানীয়দের অভিযোগ: বিচার প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা দাবি করছেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন ও ওয়ার্ড সদস্য ইব্রাহিম অভিযুক্তদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এমনকি পুলিশের ওপর প্রভাব খাটিয়ে একটি সুবিধাজনক তালিকা প্রস্তুত করার অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।

📌 পুলিশ বলছে কী?

রামগতি থানার ওসি কবির হোসেন জানিয়েছেন, ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের বিরুদ্ধেও ওঠা অভিযোগ তদন্তাধীন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান (পরিদর্শক) বলেন, “মামলাটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে তদন্ত চলছে। খুব শিগগিরই আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।”

🔍 নিহত ব্যক্তি কে ছিলেন?

পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি বলে বেওয়ারিশ মরদেহ হিসেবে দাফন করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, তিনি গত ১৫-২০ দিন ধরে আজাদনগর বাজার এলাকায় ঘোরাঘুরি করতেন। মাঝেমধ্যে ভিক্ষা চাইতেন কিংবা এলোমেলো কথা বলতেন। কেউ তার পরিচয় জানেন না।

📢 এলাকাবাসীর দাবি:

  • দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার
  • নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত
  • স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *