ইসলাম মানবাধিকারের প্রশ্নে অত্যন্ত স্পষ্ট ও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। ইসলামী শিক্ষায় মানুষের অধিকার রক্ষা করা শুধু একটি সামাজিক দায়িত্ব নয়, বরং তা পরকালের সফলতার গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। কোরআন-হাদিসে আল্লাহ তায়ালা মানুষের অধিকারকে নিজের অধিকার থেকেও অগ্রাধিকার দিয়েছেন।
মানুষের অধিকার আদায়ের গুরুত্ব
ইসলাম বলে, যদি কেউ কোনো ব্যক্তির অধিকার ক্ষুণ্ন করে, তবে সে আল্লাহর কাছেও অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে। কোনো ব্যক্তি অন্যের অধিকার ফিরিয়ে না দিলে বা ক্ষমা না চেয়ে থাকলে, তার তওবা আল্লাহর কাছে কবুল হবে না।
হাদিস শরীফে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,
“যে ব্যক্তি কারও ওপর জুলুম করেছে, সম্মানহানি কিংবা সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, সে যেন আজই সেই ব্যক্তি থেকে ক্ষমা চেয়ে নেয়। কারণ কিয়ামতের দিনে দুনিয়ার সম্পদ কোনো কাজে আসবে না।” (বুখারি ২৪৪৯)
সম্পদ ও অধিকার রক্ষার নির্দেশ
ইসলাম মানুষকে তার বৈধ সম্পদ রক্ষায় সচেষ্ট থাকতে উৎসাহিত করেছে। নিজের অধিকার আদায়ে হালাল ও বৈধ উপায় অবলম্বন করাও ইসলামের নির্দেশনা। এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে জানতে চাইলেন, কেউ যদি তার সম্পদ ছিনিয়ে নিতে আসে তাহলে কী করণীয়? রাসুল (সা.) বলেন, “প্রতিরোধ করবে। যদি তাকে হত্যা করে, তুমি শহীদ হবে। যদি তুমি তাকে হত্যা করো, সে জাহান্নামে যাবে।” (মুসলিম ২৫৭)
মানুষের ওপর জুলুমের কঠোর শাস্তি
দুনিয়াতে কেউ যদি অপর কারও অধিকার হরণ করে, তা সম্পদ হোক, সম্মান হোক বা জীবন—সবকিছুর বিচার হবে কিয়ামতের দিনে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি যদি দুনিয়াতে নিজের অধিকার আদায় না করতে পারেন, তবে কিয়ামতের দিনে জালিমের নেক আমল থেকে তার পাওনা দেওয়া হবে। যদি জালিমের কোনো আমল না থাকে, তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির গুনাহ তাকে দিয়ে দেওয়া হবে এবং সে জাহান্নামে যাবে।
প্রকৃত গরিব কারা?
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
“আমার উম্মতের প্রকৃত গরিব সেই, যে কিয়ামতের দিনে সালাত, সিয়াম, যাকাতসহ অনেক ভালো আমল নিয়ে উপস্থিত হবে; কিন্তু দুনিয়ায় সে অনেকের ওপর জুলুম করেছে, গালি দিয়েছে, অপবাদ দিয়েছে, কারও সম্পদ আত্মসাৎ করেছে—ফলে তার নেক আমলগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বণ্টন করে দেওয়া হবে। এরপরও যদি পাওনা থেকে যায়, তবে তাদের গুনাহ তার ওপর চাপিয়ে দিয়ে তাকে জাহান্নামে পাঠানো হবে।” (মুসলিম ২৫৮১)