বাংলাদেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিশনের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে ভয়াবহ তথ্য—গুমের শিকারদের অনেককেই শুধু গুলি করে হত্যা করা হয়নি, বরং ইনজেকশন পুশ করে, ইটভাটায় পুড়িয়ে, ট্রেন বা গাড়ির নিচে ফেলে ‘দুর্ঘটনার নাটক’ সাজিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি কিছু মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও চাপ
প্রতিবেদনের ৬ষ্ঠ অধ্যায়ে কমিশন তুলে ধরেছে নিরাপত্তা বাহিনীর ভেতরে থাকা মতপার্থক্য, মানসিক যন্ত্রণা এবং অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের চিত্র। কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন জানান, অনেক কর্মকর্তা গুমে জড়াতে চাননি, কিন্তু ভয়, নিরাপত্তা ও চাকরি হারানোর আশঙ্কায় বাধ্য হয়েছিলেন।
তিনি বলেন,
“তারা এটা মেনে নিতে পারছিলেন না। কিন্তু তাদের বাধ্য করা হয়েছে। চাকরি ও পারিবারিক নিরাপত্তার কথা ভেবে তাঁরা মুখ বন্ধ রেখেছেন।”
নাটক সাজিয়ে হত্যার বর্ণনা
তদন্তে জানা যায়, গুমের শিকার ব্যক্তিদের ইনজেকশন পুশ করে হত্যার পর মরদেহ ইটভাটায় পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। কেউ কেউ ট্রেন কিংবা বাসের নিচে ফেলে ‘দুর্ঘটনার গল্প’ সাজিয়েছেন। কমিশন বলছে, এসব কাজ সংগঠিত হয়েছে পরিকল্পিত তিনটি স্তরে—প্রথম স্তরে ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী; দ্বিতীয় স্তরে গোয়েন্দা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এবং তৃতীয় স্তরে বাহিনীর মাঠপর্যায়ের ইউনিট প্রধানরা।
কেউ প্রতিবাদ করলেও পড়েছে রোষানলে
কমিশন আরও জানায়, যারা গুমে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন বা ভুক্তভোগীদের সহায়তা করেছিলেন, তাদেরকে তিরস্কার ও হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে। অনেকেই পরবর্তীতে ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য জঙ্গি নাটকের মতো মিথ্যা অপারেশনে অংশ নেন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকের মতামত
নিরাপত্তা বিশ্লেষক অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. আমিনুল করিম বলেন,
“কমিশনের কাজ প্রশংসনীয়। তাদের আরও গভীরে যেতে হবে, যেন এমন বর্বর ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে।”
দায়মুক্তির সংস্কৃতি এখনও বজায়
কমিশন জানিয়েছে, গুম নিয়ে তদন্তে এখনও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পূর্ববর্তী অব্যবস্থাপনা ও দায়মুক্তির সংস্কৃতি। তারা বলছে, বিচারহীনতার এই কাঠামো ভেঙে না ফেলা হলে সত্য উন্মোচন কঠিন হবে।