মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের যৌথ সামরিক হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর, মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজারে, যেখানে তেলের দাম এক লাফে কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সোমবার (২৩ জুন) ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারের দাম ব্যারেলপ্রতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮.৫৩ ডলার, যা আগের চেয়ে ১.৫২ ডলার বা ১.৯৭% বেশি। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৫.৩৫ ডলার, বৃদ্ধি পেয়েছে ১.৫১ ডলার বা ২.০৪%।
সেশনের শুরুতেই উভয় প্রকার তেলের দাম ৩ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ৮১.৪০ ডলার ও ৭৮.৪০ ডলার ছুঁয়েছিল, যা গত পাঁচ মাসে সর্বোচ্চ।
🌍 হরমুজ প্রণালী কেন্দ্র করে বাড়ছে উদ্বেগ
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল উৎপাদনকারী দেশ ইরান। দেশটির প্রতিশোধের আশঙ্কায় হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই প্রণালী দিয়ে বিশ্ববাজারে সরবরাহ হয় প্রায় ২০% অপরিশোধিত তেল, যা বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট তৈরি হতে পারে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন প্রেস টিভি জানিয়েছে, দেশটির সংসদ হরমুজ প্রণালী বন্ধে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। যদিও অতীতে এমন হুমকি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
নয়াদিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এসএস ওয়েলথস্ট্রিটের প্রতিষ্ঠাতা সুগন্ধা সচদেব বলেন,
“বর্তমান ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা চলতে থাকলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ থেকে ১২০ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।”
গোল্ডম্যান স্যাক্স এক বিশ্লেষণে জানায়, যদি হরমুজ প্রণালীর মাধ্যমে সরবরাহ এক মাসের জন্য অর্ধেকে নেমে আসে এবং পরবর্তী ১১ মাস ১০% হ্রাস পায়, তাহলে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম সাময়িকভাবে ১১০ ডলার পর্যন্ত উঠে যেতে পারে।
স্পার্টা কমোডিটিসের বিশ্লেষক জুন গোহ জানান,
“হরমুজ প্রণালী যদি কার্যত অচল হয়ে পড়ে, তাহলে বিকল্প পাইপলাইনের মাধ্যমেও পূর্ণমাত্রায় তেল রফতানি সম্ভব হবে না। এতে বৈশ্বিক তেল অবকাঠামো বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে।”