প্রতিবছর রাজশাহী অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ আম উৎপাদন হলেও সঠিক সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের অভাবে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ফল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আম সংরক্ষণাগার নির্মাণের দাবি জোরালো হয়েছে ব্যবসায়ী ও চাষিদের পক্ষ থেকে।
🍋 মৌসুমি বিপর্যয়ে বাজারে ক্ষতির মুখে আমচাষ
নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীতে সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হয়। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের এই মৌসুমে:
- নওগাঁ: ৪.৩০ লাখ মেট্রিক টন
- চাঁপাইনবাবগঞ্জ: ৩.৮৬ লাখ মেট্রিক টন
- রাজশাহী: ২.৬০ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই বিশাল উৎপাদনের বিপরীতে আম নামানোর পর বাজারে সঠিকভাবে সরবরাহ ও সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ৩০–৪০ শতাংশ ফল পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
🥭 ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ
বানেশ্বরের আম ব্যবসায়ী শামীম হোসেন বলেন, “হঠাৎ তীব্র গরমে একসঙ্গে অনেক আম পাকলেও বাজারে সেই অনুপাতে ক্রেতা ছিল না। ফলে দাম কমে যাওয়ার পাশাপাশি অনেক আম পচে যায়।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটের ব্যবসায়ী নাসির পাটোয়ারী এবং নওগাঁর আম ব্যবসায়ী ঝন্টু জানান, বিশেষ করে ল্যাংড়া, আম্রপালি ও ফজলি জাতের আম এই বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নওগাঁতে পচে যাওয়া আমের বাজারমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা বলে দাবি তাদের।
🏢 সংরক্ষণাগার তৈরির জোর দাবি
রাজশাহী চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক সাইফুল ইসলাম হীরক বলেন, “এ অঞ্চলে যদি একটি আধুনিক আম সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা হয়, তাহলে প্রতিবছর এই ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি থেকে ব্যবসায়ী ও চাষিরা রক্ষা পাবেন।”
🧃 প্রক্রিয়াজাত শিল্পে সম্ভাবনার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা
ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রক্রিয়াজাত প্ল্যান্ট স্থাপন করে আম থেকে জুস, আচার, আমসত্ত্ব বা চকলেট তৈরি করা যেতে পারে। এতে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও রফতানির সম্ভাবনা বাড়বে।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইয়াসিন আলী বলেন, “প্রক্রিয়াজাত করলে আমের বাজারমূল্য বৃদ্ধি পাবে এবং চাষিরা সরাসরি লাভবান হবেন।”
🌞 বিকল্প সংরক্ষণ পদ্ধতির প্রস্তাব
নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আওয়াল জানিয়েছেন, “আম শুকানো এবং ‘হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট’ পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ে চাষিদের সচেতন করা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি গ্রহণ করলে আম দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে।”
