তীব্র তাপপ্রবাহে ওষুধের গুণগত মানে বিপর্যয়: জনস্বাস্থ্যে শঙ্কা বাড়ছে

সারাদেশে বিরাজমান প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের ফলে ফার্মেসি ও ওষুধের দোকানগুলোতে ওষুধ সংরক্ষণের জন্য নির্ধারিত তাপমাত্রা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে ওষুধের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

🌡 ওষুধ সংরক্ষণে তাপমাত্রা নিয়ে বিপাকে ফার্মেসিগুলো

মাঠপর্যায়ের জরিপে দেখা গেছে, দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ ওষুধের মোড়কে উল্লেখ রয়েছে যে সেগুলো ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু চলমান তীব্র দাবদাহে দোকানগুলোর ভেতরের তাপমাত্রা তা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

বিশেষত যেসব ফার্মেসিতে এসি বা পর্যাপ্ত কোল্ড চেইন ব্যবস্থা নেই, সেখানে অ্যান্টিবায়োটিক, ইনসুলিন, টিকা, জেল, অয়েন্টমেন্ট ও ফুড সাপ্লিমেন্টের মতো সংবেদনশীল ওষুধগুলো দ্রুত গুণগত মান হারাচ্ছে।

❄ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ফার্মেসি এখনো সীমিত

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে নিবন্ধিত ফার্মেসি ও ওষুধের দোকানের সংখ্যা ২ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৫টি, অথচ এর মধ্যে মাত্র ৫২৮টি দোকানে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা।
অর্থাৎ দেশের ৯৯.৭৭ শতাংশ দোকানেই নিরাপদ তাপমাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।

👨‍⚕️ বিশেষজ্ঞদের মতামত

একুশে পদকপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন,

“সঠিক তাপমাত্রায় সংরক্ষণ না করলে ওষুধের কার্যকারিতা ধ্বংস হয়ে যায়। বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক, হরমোন ও বায়োমলিকুলার ওষুধ উচ্চ তাপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা রোগীর স্বাস্থ্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, ওষুধ প্রশাসনের উচিত এখনই নজরদারি বাড়ানো এবং ফার্মেসিগুলোকে বাধ্য করা যেন তারা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়।

🛡 সমাধানে যা প্রয়োজন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনস্বাস্থ্যের নিরাপত্তায় জরুরি ভিত্তিতে নিচের পদক্ষেপগুলো নেওয়া প্রয়োজন:

  • প্রতিটি ফার্মেসিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা
  • ওষুধ সংরক্ষণে ‘কোল্ড চেইন’ ব্যবস্থার বাধ্যবাধকতা
  • নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নিয়মিত মনিটরিং
  • ক্রেতাদের সচেতনতা বাড়াতে প্রচারণা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *