🌿 পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ: ফরজ গোসলের গুরুত্ব
ইসলামে পবিত্রতা ঈমানের অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচিত। এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে গোসল, যা একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো—পুরো শরীর ধুয়ে পবিত্রতা অর্জন করা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, পবিত্র পানি দিয়ে শরীরের প্রতিটি অংশ ধুয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের উদ্দেশ্যে সম্পন্ন করাকে গোসল বলা হয়।
বিশেষ কিছু শারীরিক অবস্থার কারণে গোসল ফরজ হয়ে যায়। যেমন—সহবাস, মাসিক শেষে, নেফাস (প্রসব পরবর্তী রক্তপাত) শেষ হলে, ইত্যাদি।
📖 কোরআন থেকে নির্দেশনা
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَإِن كُنتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا
অর্থ: “যদি তোমরা অপবিত্র হও, তবে ভালোভাবে পবিত্রতা অর্জন করো।”
(সূরা মায়েদা, আয়াত: ৬)
এই আয়াত ফরজ গোসলের আবশ্যকতা ও তা যথাযথভাবে পালন করার নির্দেশনা দেয়।
🧼 ফরজ গোসলের তিনটি আবশ্যিক কাজ
হাদিস ও ফুকাহায়ে কেরামের মতামতের আলোকে ফরজ গোসলের তিনটি রুকন বা আবশ্যিক অংশ রয়েছে:
- কুলি করা – মুখে পানি ঢেলে ভালোভাবে গার্গল করা।
📚 সূত্র: সহিহ বুখারি - নাকে পানি দেয়া – নাকের ভিতরে পানি পৌঁছানো।
📚 সূত্র: ইবনে মাজাহ - সম্পূর্ণ শরীর ধোয়া – এমনভাবে গোসল করা যাতে দেহের এক চুল পরিমাণ স্থানও শুকনো না থাকে।
📚 সূত্র: আবু দাউদ
🛁 ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম
ফরজ গোসল সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করা জরুরি:
- নিয়ত করা – মনে মনে অপবিত্রতা দূর করার ইচ্ছা করা।
- বিসমিল্লাহ বলে গোসল শুরু করা।
- উভয় হাত কবজি পর্যন্ত ধোয়া।
- বাঁ হাতে গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করা।
- যদি কোনো নাপাক জিনিস থাকে তবে তা ধুয়ে ফেলা।
- নামাজের মতো ওজু করা (পা ধোয়া ছাড়া)।
- কুলি ও নাকে পানি দেয়া।
- সম্পূর্ণ শরীরে পানি ঢালানো—মাথা থেকে পা পর্যন্ত ভালোভাবে ধুয়ে নেয়া।
- সবশেষে পা ধোয়া, গোসলস্থানের বাইরে গিয়ে।
🌺 রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ফরজ গোসলের পদ্ধতি
হজরত মায়মুনা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন:
“আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জন্য গোসলের পানি প্রস্তুত করি। তিনি প্রথমে হাত ধৌত করেন, এরপর লজ্জাস্থান পরিষ্কার করেন, কুলি করেন, নাকে পানি দেন, মুখমণ্ডল ও দুই হাত ধৌত করেন। পরে মাথায় পানি ঢেলে পুরো শরীর ধুয়ে ফেলেন এবং শেষে পা ধুয়ে নেন।”
📚 সূত্র: আবু দাউদ, হাদিস: ২৪৫
📌 ফরজ গোসল না করলে কী কী নিষিদ্ধ?
যদি কারও উপর গোসল ফরজ হয়, তবে তা আদায় না করে নিম্নলিখিত কাজগুলো সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ:
- নামাজ আদায় করা
- কাবা শরিফ তাওয়াফ করা
- কোরআন তিলাওয়াত বা স্পর্শ করা
- মসজিদে প্রবেশ করা
📚 ফুকাহায়ে কেরামের মতানুসারে এসব বিষয়ে কঠোরতা রয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত কাজগুলো, যেমন খাওয়া-দাওয়া, চলাফেরা, ইত্যাদি সীমিতভাবে করা যেতে পারে।
🕊️ হাদিসের আলোকে পরিষ্কার বার্তা
একবার হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় জানাবাত অবস্থায় ছিলেন। তিনি রাসূলের সামনে না দাঁড়িয়ে সরে পড়েন। পরে গোসল করে এসে কারণ ব্যাখ্যা করলে রাসূল (সা.) বলেন:
“সুবহানাল্লাহ! একজন মুসলিম কখনো নাপাক হতে পারে না।”
📚 বুখারি, হাদিস: ২৭৯
💡 গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ
গোসল ফরজ অবস্থায় যদি খাওয়ার প্রয়োজন হয় কিংবা ঘুমানোর সময় হয়, তবে শরিয়ত মোতাবেক শুধু অজু করেও সাময়িকভাবে প্রয়োজনীয় কাজ করা জায়েয রয়েছে। হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেন,
“রসুল (সা.) জানাবাত অবস্থায় ঘুমাতে চাইলে বা খেতে চাইলে নামাজের মতো করে অজু করে নিতেন।”
📚 মুসলিম, হাদিস: ৩০৫