ইসলাম ধর্মে জান্নাত (স্বর্গ) মুমিনদের জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত আবাসস্থল। কিন্তু এই পরকালীন শান্তি অর্জনের জন্য দুনিয়াতে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবনযাপন করা আবশ্যক। অন্যথায় অপেক্ষা করে কঠিন শাস্তি ও জাহান্নামের আগুন। নারীদের জন্য হাদিসে বিশেষ কিছু নির্দেশনা রয়েছে, যা পালন করলে তারা জান্নাত লাভ করতে পারেন। অন্যদিকে কিছু নেতিবাচক আচরণ নারীদের জাহান্নামের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
নারীদের উদ্দেশ্যে রাসুল (সা.)-এর সতর্কবার্তা
রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার নারীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেন:
“হে নারীগণ! অধিক হারে দান-সদকা করো এবং আল্লাহর কাছে বেশি বেশি ক্ষমা চাও। কারণ, আমি জাহান্নামে নারীদের সংখ্যা বেশি দেখেছি।”
(হাদিস: সহিহ মুসলিম, ৭৯)
উপস্থিত একজন নারী জিজ্ঞেস করলে, রাসুল (সা.) উত্তর দেন, নারীরা তাদের স্বামীদের প্রতি অকৃতজ্ঞতা ও অতিরিক্ত অভিশাপ দেওয়ার অভ্যাসের কারণে জাহান্নামে বেশি সংখ্যায় যাবে।
যে গুণগুলো নারীদের জান্নাতের পথে নিয়ে যায়
হাদিস ও কোরআনের আলোকে কিছু গুণাবলি নারীদের জান্নাতপ্রাপ্তির যোগ্য করে তোলে। যেমন:
১. নামাজ, রোজা, কোরআন তিলাওয়াত ও জিকিরে সময় ব্যয়
যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন, রমজানের রোজা রাখেন, নিজের সতীত্ব রক্ষা করেন এবং স্বামীর প্রতি অনুগত থাকেন—তাঁর জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে।
(হাদিস: তিরমিজি ও তাবরানি)
২. ঘরকেন্দ্রিক জীবনযাপন
অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাঘুরি না করে যারা হায়া, পর্দা ও সম্ভ্রম বজায় রেখে নিজ গৃহকেন্দ্রিক জীবন যাপন করেন।
৩. পারিবারিক সম্পর্ক ও দায়িত্ব পালন
নারী যদি স্বামী, পিতা-মাতা, ভাই, সন্তানদের প্রতি সম্মান ও আন্তরিকতা দেখান, এবং ঘরের কাজে নিষ্ঠাবান হন, তাহলে সে জান্নাতের উপযুক্ত।
৪. বিনয় ও তুষ্টি
নিজে অল্পে সন্তুষ্ট থাকেন, অহংকার পরিহার করেন এবং পরিপূর্ণ সততার সাথে পরিবার রক্ষা করেন।
৫. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও গৃহসজ্জা
নিজ ঘরদুয়ার পরিস্কার রাখেন, অশ্লীল গান, ছবি বা অনৈসলামিক বিষয়বস্তু ঘরে স্থান দেন না।
৬. সময় ব্যবস্থাপনা
কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলে কোরআন তিলাওয়াত, দোয়া বা ইবাদতে সময় দেন; গিবত বা পরনিন্দায় সময় নষ্ট করেন না।
যে আচরণ নারীদের জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে
রাসুল (সা.) মিরাজের রাতে জাহান্নামের একাধিক নারীর কঠিন শাস্তি প্রত্যক্ষ করেন। তিনি বলেন:
❌ পরপুরুষের সামনে চুল খোলা রাখা
যেসব নারী চুল ঢেকে না রেখে বাহিরে ঘোরে, তারা জাহান্নামে চুল দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় শাস্তি ভোগ করবে। (সূরা আন-নূর, আয়াত ৩১)
❌ স্বামীর প্রতি কটুবাক্য ও শ্বশুরবাড়ি-প্রতিবেশীর প্রতি অসৌজন্য
যেসব নারী কথাবার্তায় স্বামী, আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের কষ্ট দেন, তাদের মুখ হবে বিষাক্ত এবং তারা কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবেন।
❌ অবৈধ সম্পর্ক
বিবাহিত হয়েও যারা পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে, তাদের স্তনে ঝুলন্ত অবস্থায় জাহান্নামে দেখা গেছে বলে রাসুল (সা.) বর্ণনা করেছেন।
❌ ইবাদত থেকে উদাসীনতা
যেসব নারী ফরজ গোসল ও নামাজে গাফিল, তারা পা ও হাত ঝুলন্ত অবস্থায় শাস্তির কবলে পড়বে।
❌ হিংসা, গিবত ও মিথ্যাচার
পরনিন্দা, হিংসা এবং মিথ্যা বলার কারণে অনেক নারীকে কুকুরের আকৃতিতে জাহান্নামে ভয়াবহ শাস্তি পেতে দেখা গেছে।
উপসংহার
ইসলাম নারীদের মর্যাদা দিয়েছে সম্মানের আসনে। রাসুল (সা.) নারীদের কোনোভাবেই ছোট করেননি বরং তাদের আত্মশুদ্ধি ও পরকালীন মুক্তির পথ দেখিয়েছেন। প্রত্যেক নারীর উচিত রাসুল (সা.)-এর উপদেশ মেনে চলা, আল্লাহর বিধান পালনে সচেষ্ট হওয়া এবং নিজের চরিত্র ও আচরণ পরিশুদ্ধ রাখা।
✅ জান্নাতের পথে এগিয়ে যেতে চাইলে সৎচরিত্র, ইবাদতে মনোযোগ ও পারিবারিক দায়িত্বশীলতা নারীর শ্রেষ্ঠ পাথেয়।