নামাজ ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের অন্যতম। এটি শুধু একটি ইবাদত নয়, বরং আত্মিক প্রশান্তি, আল্লাহর নৈকট্য এবং ইহকাল ও পরকালীন মুক্তির নিশ্চিত পথ। যারা সময়মতো খুশু-খুযুসহকারে নামাজ আদায় করেন, তাদের জন্য রয়েছে অসংখ্য পুরস্কার ও সাওয়াবের ঘোষণা।
জান্নাতের প্রতিশ্রুতি
হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাযথভাবে হেফাজত করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। (আবু দাউদ, নাসাঈ, তিরমিজি, ইবন মাজাহ)
কিয়ামতের দিন মুক্তির কারণ
রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি নামাজ হিফাজত করে, তার জন্য নামাজ হবে কিয়ামতের দিন নূর, দলিল এবং মুক্তির কারণ। এটি প্রমাণ করে যে, নামাজ ঈমানের প্রকাশ এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাধ্যম।
আল্লাহর নৈকট্য লাভের শ্রেষ্ঠ উপায়
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন:
“সাজদাহ করো এবং (আমার) নিকটবর্তী হও।” (সূরা আল-আলাক: ১৯)
রাসুল (সা.)-এর বর্ণনায় আছে, সাজদাহর সময়ই বান্দা সবচেয়ে বেশি তার রবের নিকটবর্তী হয়। তাই নামাজে বিশেষ করে বেশি করে দোয়া করার উৎসাহ দিয়েছেন তিনি। (সহিহ মুসলিম)
গুনাহের কাফ্ফারা
নামাজ শুধুমাত্র আত্মিক প্রশান্তির মাধ্যম নয়, বরং গুনাহ মোচনের উপায়। সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করে, খুশু-খুযুসহকারে নামাজ আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়; যতক্ষণ না সে কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়।
সর্বোত্তম আমল
হাদিসে বর্ণিত, হজরত আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা.) জিজ্ঞাসা করলে রাসুল (সা.) বলেন,
“সময়ে সময়ে নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম আমল।” এরপর তিনি পিতামাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের কথা বলেন। (সহিহ বুখারী)
আত্মিক শান্তি ও আরামের উৎস
আল্লাহ বলেন:
“জেনে রাখ! আল্লাহর জিকিরেই অন্তর প্রশান্ত হয়।” (সূরা রা’দ: ২৮)
আর নামাজ তো মূলত জিকির প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। তাই রাসুল (সা.) বিলাল (রা.)-কে বলতেন,
“ওঠো, নামাজের মাধ্যমে আমাদের প্রশান্তি দাও।” (মুসনাদে আহমদ)
তিনি আরও বলেন, “নামাজই আমার চোখের প্রশান্তি।” (সুনান নাসাঈ)
নামাজ বিমুখদের জন্য সতর্কবার্তা
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“যে আমার জিকির (নামাজ) থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জীবন সংকুচিত করব এবং কিয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় resurrect করব।” (সূরা ত্বাহা: ১২৪)
উপসংহার
নামাজ হলো মুমিনের আত্মার খোরাক, জীবন পরিচালনার দিশারি এবং চিরন্তন মুক্তির পাথেয়। যারা নামাজে অলসতা করেন, তারা শুধুমাত্র আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করেন না, বরং নিজের আত্মিক শান্তি ও সফলতাকেও ধ্বংস করেন। সময়মতো ও খুশু-খুযুসহকারে নামাজ আদায় করলে একদিকে যেমন গুনাহ মাফ হয়, তেমনি অন্যদিকে আল্লাহর নৈকট্য ও জান্নাত লাভ সহজ হয়।