বগুড়ায় ঘটকালির জেরে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর, হাসপাতালে গুরুতর আহত ব্যক্তি

ঘটকালির দায়ে এক বৃদ্ধকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়েছে এক পরিবার—এমন চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায়। ‘লুঙ্গি উপহার’ দেওয়ার নাম করে তাকে বাড়িতে ডেকে নেওয়া হয়, এরপর চলে অমানবিক নির্যাতন। বর্তমানে তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

ঘটনার বিস্তারিত

গত ১৫ জুন (রোববার) সন্ধ্যায় উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের সূত্রাপুর গোয়ালপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি মজিবর শেখ (৬৫), তিনি ওমরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তার ছোট ভাই নজরুল শেখ চারজনের বিরুদ্ধে শেরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, আহত অবস্থায় মজিবরকে রাতেই ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তার শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

ঘটনার পেছনের কারণ

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ জুন জহুরুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া খাতুন (২১) ও বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মুন্না (২৮)-এর মধ্যে বিয়ে হয়। বিয়ের ঘটক ছিলেন মজিবর শেখ। বিয়ের পর কনে শ্বশুরবাড়িতে গেলেও দাম্পত্য সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। কনের পরিবার অভিযোগ তোলে, ছেলের পরিবার মেয়েকে মেনে নিচ্ছে না। আর ঘটক মজিবর ছেলের পরিবার সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়েছেন বলে অভিযোগ।

নির্যাতনের বর্ণনা

মজিবর শেখ জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জহুরুল ইসলামের পরিবার তাকে লুঙ্গি উপহারের কথা বলে বাড়িতে ডাকে। সেখানে নিয়ে তাকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে ঘণ্টাখানেক ধরে লাঠিপেটা করা হয়। হাত, পা ও মাথায় প্রচণ্ড আঘাত করেন অভিযুক্তরা। পরে তার ভাই নজরুল এসে তাকে উদ্ধার করেন।

অভিযুক্তের বক্তব্য

কনের বাবা জহুরুল ইসলাম বলেন, বিয়ের পর মেয়ের শ্বশুরবাড়ি থেকে ভালো আচরণ না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা রাগের বশে মজিবরকে একটু মারধর করেছে। তিনি দাবি করেন, ঘটক হিসেবে মজিবর ছেলে পক্ষকে নিয়ে বাড়িয়ে বলেছিলেন।

পরিবার ও পুলিশের বক্তব্য

মজিবরের ছেলে মো. সোনাউল্লাহ শেখ বলেন, “আমার বাবা কোনো পেশাদার ঘটক নন। কোনো আর্থিক লেনদেন ছাড়াই তিনি শুধু ভালো সম্পর্কের ভিত্তিতে এই বিয়ের আয়োজন করেন। তাকে যেভাবে নির্যাতন করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ অমানবিক ও নিন্দনীয়।”

শেরপুর থানার উপপরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে মারধরের সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *