জুলাই-আগস্ট ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে আহত হওয়া ‘জুলাই যোদ্ধারা’ আগামী মাস থেকে মাসিক ভাতা পাবেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। একইসঙ্গে তারা আজীবন বিনামূল্যে সরকারি মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা উপভোগ করবেন।
সোমবার (২৩ জুন) সচিবালয়ে বাসসকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে উপদেষ্টা জানান, চলমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্যোগে মাত্র কয়েক মাসেই ‘জুলাই শহীদ’ ও ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ চূড়ান্ত তালিকা প্রণয়ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আহতদের জন্য পুনর্বাসন, প্রশিক্ষণ এবং অর্থনৈতিক সহায়তার পথ খুলে যাচ্ছে।
জুলাই যোদ্ধাদের পুনর্বাসনে পৃথক অধিদপ্তর
উপদেষ্টা জানান, জুলাই যোদ্ধাদের স্বার্থ দেখভাল ও সেবা প্রদানে একটি নতুন অধিদপ্তর গঠন করা হয়েছে, যেখানে ২০ জন কর্মকর্তা নিয়োজিত আছেন। অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে এই অধিদপ্তর সার্বক্ষণিক কাজ করছে।
ক্যাটাগরি অনুযায়ী মাসিক ভাতা
আহত ‘জুলাই যোদ্ধাদের’ তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে মাসিক ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে:
- ক্যাটাগরি ‘এ’: যারা গুরুতরভাবে আহত এবং অন্যের সহায়তা ছাড়া চলাফেরা করতে অক্ষম, তারা মাসে ২০ হাজার টাকা এবং এককালীন ৫ লাখ টাকা সহায়তা পাবেন। এর মধ্যে ২ লাখ টাকা ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে।
- ক্যাটাগরি ‘বি’: আংশিক অক্ষম যোদ্ধারা (যেমন একটি অঙ্গ হারিয়েছেন), তারা মাসে ১৫ হাজার টাকা এবং এককালীন ৩ লাখ টাকা পাবেন।
- ক্যাটাগরি ‘সি’: যারা চিকিৎসার পর সুস্থ হয়েছেন, তাদের মাসে ১০ হাজার টাকা এবং এককালীন ১ লাখ টাকা দেয়া হবে।
শহীদ পরিবারদের সহায়তা
৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদ’ পরিবারকে এককালীন ৩০ লাখ টাকা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রথম ধাপে ১০ লাখ টাকা জাতীয় সঞ্চয়পত্র আকারে দেওয়া হয়েছে, আর বাকি ২০ লাখ দেয়া হবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরে। প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকার ভাতাও পাবেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
চাকরি ও চিকিৎসা সুবিধা
উপদেষ্টা জানান, শহীদ ও আহত যোদ্ধাদের পরিবার এবং সদস্যরা সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার পাবেন। গুরুতর আহতদের জন্য বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭ জনকে তুরস্কে এবং অন্যদের থাইল্যান্ডে চিকিৎসা করানো হয়েছে।
৫ আগস্ট হবে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’
এই অভ্যুত্থানের স্মৃতি ধরে রাখতে প্রতি বছর ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জাতীয় দিবসের মর্যাদায় এই দিনটি উদযাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
ওয়ারিশ ও তালিকা সংশোধন
উপদেষ্টা জানান, ১৩৪টি শহীদ পরিবার এখনো ওয়ারিশ জটিলতার কারণে সহায়তা পাননি। এ সমস্যা দ্রুত সমাধানে কাজ চলছে। আহতদের তালিকায় যেসব ভুল পাওয়া গেছে, তা তদন্তসাপেক্ষে সংশোধন করা হবে।