দেশজুড়ে ধান কাটার ভরা মৌসুম চলছে, অথচ বাজারে চালের দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে। গত দুই সপ্তাহ ধরে ক্রেতাদেরকে অতিরিক্ত দামে চাল কিনতে হচ্ছে, তবে এই মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না অনেক বিক্রেতাও। বাজার বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই দাম বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ও মজুতদারদের কারসাজি।
✅ চালের দাম বেড়েছে কতটা?
বাজার পরিদর্শনে দেখা গেছে, মাত্র দুই সপ্তাহেই মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ২-৩ টাকা, আর সরু চালের ক্ষেত্রে এ বৃদ্ধি ৭-৮ টাকা পর্যন্ত। এতে প্রতি বস্তায় দাম বেড়েছে প্রায় ৪০০ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবি, বেশি দামে চাল কিনে তারা কম দামে বিক্রি করতে পারছেন না, ফলে বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এক বিক্রেতা জানান, “ঈদের পর থেকেই চালের দাম হঠাৎ করেই বেড়েছে, অথচ সরবরাহে কোনো সংকট নেই। পরিবহন ব্যয় বা শ্রমিক মজুরিও বাড়েনি।”
🔍 মিলারদের বক্তব্য: দায় মজুতদারদের
বাংলাদেশ অটো, মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি সহিদুর রহমান পাটোয়ারি জানান, “অনেকেই স্টক ব্যবসার নামে ধান মজুত করছেন, ফলে মিলারদের বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে। তারই প্রভাব পড়ছে চালের বাজারে।”
📊 অর্থনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি: বাজারে কারসাজি স্পষ্ট
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন,
“কিছু চালকল মালিক, বড় ব্যবসায়ী ও করপোরেট হাউজের কারসাজিতে বাজার অস্থির হয়েছে। সরকারি মনিটরিং জোরদার না করলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, সরকারি নজরদারি থাকলে মজুতদারদের দৌরাত্ম্য কমবে এবং চালের দামও স্বাভাবিক হবে।
⚖️ আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন,
“চালকল, পাইকার বা খুচরা পর্যায়ে কেউ যদি বাজার অস্থিতিশীল করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
📦 বর্তমানে দেশে চালের মজুত কত?
খাদ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে মোট ১৬.৭১ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে, যার মধ্যে চালের পরিমাণ প্রায় ১২.৭৫ লাখ টন। অর্থাৎ সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই, যা দাম বৃদ্ধির প্রকৃত কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।