আধুনিক বিজ্ঞানের যুগেও সমাজে কালো জাদু, বশীকরণ ও বিদ্বেষণের মতো নানা কুসংস্কারমূলক কর্মকাণ্ড এখনও বিদ্যমান। এর প্রভাবে বহু মানুষ শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক এমনকি সামাজিক জীবনেও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। ইসলামে কালো জাদুর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়নি, বরং কোরআন ও হাদিসে এর প্রতিকার এবং সুরক্ষার উপায় স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
🧿 কালো জাদুর ধরন ও প্রাথমিক প্রতিকার
জাদু দূর করতে প্রথমে জানতে হবে জাদু কোথায় ও কিভাবে প্রয়োগ করা হয়েছে। যদি দেখা যায় কোনো বস্তু যেমন—চুল, চিরুনি বা কাপড় ব্যবহার করে জাদু করা হয়েছে, তবে সেই বস্তু পুড়িয়ে ধ্বংস করা উচিত। এতে জাদুর প্রভাব দুর্বল বা সম্পূর্ণরূপে বিলীন হয়ে যায়।
যদি জাদুকরকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়, ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে তাকে বাধ্য করতে হবে জাদু নিষ্ক্রিয় করতে। হাদিসে বলা হয়েছে—
“জাদুকরের শাস্তি হলো তাকে তরবারির আঘাতে হত্যা করা।”
(তিরমিজি হাদিস)
📖 কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত ঝাড়ফুঁকের পদ্ধতি
জাদুর প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে কোরআনের নির্দিষ্ট আয়াত ও দোয়ার মাধ্যমে ঝাড়ফুঁক করা অত্যন্ত কার্যকর। নিচে উল্লেখযোগ্য কিছু আমল তুলে ধরা হলো:
✔️ কার্যকর আয়াত ও সুরা:
- আয়াতুল কুরসি
- সুরা আরাফ, ইউনুস ও ত্বহা-তে জাদুর প্রেক্ষাপট
- সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস
✔️ রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী দোয়া:
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ أَذْهِبْ الْبَاسَ اشْفِهِ وَأَنْتَ الشَّافِي…
অর্থ: “হে আল্লাহ! মানুষের রব, কষ্ট দূর করুন। আপনি ছাড়া কোনো আরোগ্যকারী নেই। এমন আরোগ্য দিন, যাতে কোনো রোগ অবশিষ্ট না থাকে।”
(সহিহ বুখারি ৫৭৪২)
✔️ আরেকটি প্রসিদ্ধ রুকইয়া:
بِسْمِ الله أرْقِيكَ… مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ…
অর্থ: “আল্লাহর নামে আমি আপনাকে ঝাড়ফুঁক করছি। প্রতিটি অনিষ্টকারী আত্মা ও ঈর্ষাপরায়ণ চোখের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন।”
(মুসলিম ২১৮৬, তিরমিজি ৯৭২)
এই দোয়া তিনবার পড়ে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ফুঁ দেয়া এবং ওই পানিতে দোয়া পড়ে তা পান করানো ও গোসল করানো সুন্নাহর আমল।
🍃 বরই পাতার আমলে জাদু নিরাময়
দাম্পত্য বা দৈহিক দুর্বলতায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের জন্য বরই পাতার ব্যবহার একটি কার্যকর ইসলামি আমল। সাতটি কাঁচা বরই পাতা গুঁড়া করে পানিতে মিশিয়ে উপরোক্ত দোয়া ও আয়াত পড়ে ফুঁ দিতে হয়। এই পানি পান করা এবং অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করা উত্তম।
🛡️ জাদু থেকে আত্মরক্ষার ইসলামি পন্থা
জাদুর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে নিম্নোক্ত আমলগুলো নিয়মিত করা উচিত:
- ✔️ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়
- ✔️ ঘুমানোর আগে সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়ে ফুঁ দেয়া
- ✔️ আয়াতুল কুরসি নিয়মিত পাঠ
- ✔️ জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা
⚠️ সতর্কতা: কবিরাজ নয়, হক্কানী রাকির শরণাপন্ন হোন
জাদুর চিকিৎসা করতে গিয়ে কবিরাজ বা জাদুকরের শরণাপন্ন হওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কোরআন-হাদিসভিত্তিক ঝাড়ফুঁক যারা করেন—তাদের ‘রাকি’ বলা হয়। শুধুমাত্র পরহেজগার ও শরিয়তসম্মত রাকি ব্যক্তিদের মাধ্যমেই ঝাড়ফুঁক গ্রহণ করা উচিত।